বিয়ের জন্য স্বর্ণের গহনা কিনছেন? যা জানা জরুরি
বিয়ের গহনা শুধু অলংকার নয়, অনেকের কাছে এটি পারিবারিক ঐতিহ্য, আবার কারও কাছে নিরাপদ বিনিয়োগ। কিন্তু আবেগ আর সামাজিক চাপের কারণে অনেক সময় না জেনেই স্বর্ণ কেনা হয়, যা পরে আফসোসের কারণ হতে পারে। তাই বিয়ের মৌসুমে সোনা কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
স্বর্ণের মান বুঝে নিন
স্বর্ণ কেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মান বা বিশুদ্ধতা। আমাদের দেশে সাধারণত ২৪ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট ও ২১ ক্যারেট স্বর্ণের গহনা বেশি বিক্রি হয়। ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ সবচেয়ে বিশুদ্ধ হলেও এটি নরম হওয়ায় গয়না তৈরিতে কম ব্যবহৃত হয়। বিয়ের গহনার ক্ষেত্রে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ সবচেয়ে জনপ্রিয়। কেনার সময় অবশ্যই গহনায় ক্যারেটের ছাপ বা হলমার্ক আছে কি না তা দেখে নিন।
হলমার্ক ও সনদের গুরুত্ব
হলমার্কযুক্ত সোনা মানেই নির্ভরযোগ্য সোনা। স্বনামধন্য জুয়েলারি দোকান থেকে কেনা হলেও হলমার্ক ছাড়া গহনা না নেওয়াই ভালো। অনেক দোকান গহনার সঙ্গে মানের সনদ দেয়, যা ভবিষ্যতে বিক্রি বা বদলের সময় কাজে আসে। এই কাগজগুলো যত্ন করে রেখে দেওয়া উচিত।
স্বর্ণের দাম ও মজুরি আলাদা করে জানুন
স্বর্ণ কেনার সময় অনেকেই শুধু মোট দাম দেখেন, কিন্তু খেয়াল করেন না সোনার দাম আর মজুরি কত। গহনার নকশা যত জটিল হবে, মজুরি তত বেশি হবে। তাই কেনার আগে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কত, মজুরি কত এবং সব মিলিয়ে মোট খরচ কত এসব পরিষ্কারভাবে জেনে নিন।
ওজন যাচাই করতে ভুলবেন না
গহনার ওজন যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। দোকানে ডিজিটাল ওজন মেশিনে গহনা ওজন করে দেখানো হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল করুন। প্রয়োজনে নিজেও ওজন দেখে নিন। পাথর বা অতিরিক্ত অংশের ওজন সোনার সঙ্গে ধরা হচ্ছে কি না, সেটিও জেনে নেওয়া দরকার।
নকশা নয়, ব্যবহারিক দিকও ভাবুন
বিয়ের গহনা মানেই ভারি ও জাঁকজমকপূর্ণ হতে হবে এই ধারণা এখন বদলাচ্ছে। অনেকেই এখন হালকা ও ব্যবহারযোগ্য নকশার গহনা পছন্দ করছেন, যা বিয়ের পরেও নিয়মিত পরা যায়। এতে একদিকে যেমন মজুরি কম হয়, অন্যদিকে গয়নাও পড়ে থাকে না।
বদল ও বিক্রির শর্ত জেনে নিন
স্বর্ণ কেনার সময় দোকানের বদল বা বিক্রির নিয়ম জেনে নেওয়া খুব জরুরি। ভবিষ্যতে গহনা বদলাতে গেলে কত শতাংশ কাটা যাবে, মজুরি ফেরত পাওয়া যাবে কি না এসব বিষয় আগেই পরিষ্কার করে নিন। এতে পরে কোনো ঝামেলা হয় না।
বাজেট ঠিক করে কেনাকাটা করুন
বিয়ের মৌসুমে আবেগের বশে অনেক সময় বাজেটের বাইরে গিয়ে স্বর্ণ কেনা হয়। এতে আর্থিক চাপ বাড়ে। তাই আগে থেকেই বাজেট ঠিক করে নেওয়া ভালো। মনে রাখতে হবে, গহনার সৌন্দর্য তার দামে নয়, বরং ব্যবহারে।
কেনার রসিদ সংরক্ষণ করুন
স্বর্ণ কেনার পর রসিদ ও সনদ অবশ্যই সংরক্ষণ করুন। এগুলো ছাড়া ভবিষ্যতে গহনা বিক্রি, বদল বা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় এই ছোট বিষয়টি অবহেলার কারণে বড় সমস্যায় ফেলতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বিয়ের সিজনে স্বর্ণ কেনা যতটা আনন্দের, ততটাই দায়িত্বের। সামান্য সচেতনতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখলে বিয়ের গহনা হবে শুধু সৌন্দর্যের অনুষঙ্গ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ সম্পদও।

